বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমোদন পেল স্টারলিংক

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট–সেবা চালুর জন্য স্পেসএক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

এই অনুমোদনের ফলে দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে, যা বিশেষ করে দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য সুখবর বয়ে আনবে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ করতে আমরা কাজ করছি। স্টারলিংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করার জন্য আমরা তাদের ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এই অনুমোদন বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিডা থেকে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। স্টারলিংক এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এবং তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও জানান, স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা পরিচালনার জন্য যে নন–জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) লাইসেন্স প্রয়োজন, সেটির জন্য তারা আজ (রোববার) আবেদন করবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্টারলিংক যদি নিয়ম মেনে আবেদন করে, তাহলে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের এই লাইসেন্স প্রদান করব। এরপর তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার পথে আর কোনো আইনি বাধা থাকবে না।’ এই লাইসেন্সটি স্টারলিংককে তাদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের পূর্ণ সক্ষমতা দেবে।

এদিকে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আগামী ৯ এপ্রিল স্টারলিংকের ইন্টারনেট–সেবা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হবে। এই সম্মেলনে উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারী এই সেবা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, স্টারলিংকের ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্মেলনটির সরাসরি সম্প্রচারও করা হবে। এটি হবে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবার প্রথম প্রকাশ্য প্রদর্শনী, যা প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কের মধ্যে একটি টেলিফোন আলোচনা হয়। এই আলোচনায় বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট–সেবা চালুর সম্ভাবনা, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। এই কথোপকথনই স্টারলিংকের বাংলাদেশে আগমনের পথ সুগম করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি ও গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে সমস্যা হয়, সেখানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি সহজেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ইন্টারনেট সেবার বৈষম্য অনেকাংশে কমে আসবে। গ্রামের তরুণরা বাড়িতে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন শিক্ষা, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবেন।এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সমস্যা সমাধানে স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার পর যখন মোবাইল টাওয়ার বা তারের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দ্রুত যোগাযোগ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। এটি জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ বিতরণে বড় প্রভাব ফেলবে।স্টারলিংকের সেবা বাংলাদেশে পুরোপুরি চালু হলে দেশের অর্থনীতি ও ডিজিটাল রূপান্তরে নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এও মনে করছেন যে, সেবার মূল্য নির্ধারণ এবং স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় কীভাবে করা হয়, সেটি এর সাফল্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।