দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া: সম্পূর্ণ গাইড

বাংলাদেশে শিশু দত্তক নেওয়া একটি জটিল এবং আইনি দিক থেকে জড়তাবিহীন প্রক্রিয়া নয়। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশে দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যার মাধ্যমে আপনি এই পথটি আরও সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন।

কেন দত্তক নেওয়া হয়?

বাংলাদেশে নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যাদের অনেকেই সন্তানের আনন্দ ভোগ করতে চান। এই প্রক্রিয়া শুধু দম্পতির স্বপ্ন পূরণ করে না, এটি অনেক গৃহহীন শিশুর জীবনেও নতুন আলো আনে।

আইনি প্রক্রিয়া

১. শিশুর উৎস নির্ধারণ

  • অনাথ শিশু গৃহ থেকে
  • পরিত্যক্ত বা কুড়িয়ে পাওয়া শিশু
  • সারেন্ডার করা শিশুর ক্ষেত্রে

২. অভিভাবকত্বের জন্য আবেদন

বাংলাদেশে সন্তান দত্তক নেওয়ার কোনো নির্দিষ্ট আইন না থাকলেও, অনাথ শিশুর অভিভাবকত্ব নেওয়া সম্ভব। এজন্য:

  • পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।
  • ১৮৯০ সালের গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট অনুযায়ী, একজন নাবালকের অভিভাবক হিসেবে নির্ধারিত হতে হবে।

উদাহরণ: এক দম্পতি যিনি শুভ্র ও শুভ্রা নামে এক গৃহহীন শিশুকে দত্তক নিতে চান, তিনি প্রথমে শিশুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেবেন, তারপরে আদালতে আবেদন করবেন যে তারা শুভ্রকে তাদের অভিভাবকত্বে নিতে চান।

৩. আইনি শুনানি এবং মূল্যায়ন

  • আদালত শিশুর কল্যাণের জন্য শুনানি করবে।
  • সামাজিক কর্মী নিযুক্ত হবে যারা শিশুর এবং দত্তক গ্রহণকারী দম্পতির বাসস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, মানসিক সুস্থতা ইত্যাদি মূল্যায়ন করবেন।

৪. আদালতের আদেশ

আদালতের অনুমোদন পেলে:

  • অভিভাবকত্বের আদেশ জারি হবে।
  • এই আদেশের সাথে শিশুর নাম, বয়স এবং অভিভাবকত্বের বিশদ বিবরণ থাকবে।

উদাহরণ: শুভ্রকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে, আদালত শুভ্রের এবং দত্তক পিতা-মাতার বিবরণ সহ একটি আদেশ জারি করবে যে তারা এবার শুভ্রকে তাদের অভিভাবকত্বে নিতে পারবেন।

সামাজিক ও ধর্মীয় বিবেচনা

  • মুসলিম আইনে, দত্তক গ্রহণের পরিবর্তে, শিশুর অভিভাবকত্ব নেওয়া হয় কারণ ইসলামে সন্তান দত্তক নেওয়ার সরাসরি বিধান নেই।
  • হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান আছে, তবে এটি শুধু ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

অবশেষে

দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিলতাপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কিন্তু শিশুর কল্যাণ এবং নতুন জীবনের শুরুর জন্য এই প্রক্রিয়াটির গুরুত্ব অপরিমেয়। বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেকেই তাদের পরিবারকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং অনাথ শিশুদের একটি নতুন শুরু দিয়েছেন।

সূত্র: