বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাস

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাস

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাসটি প্রার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা। এই সিলেবাসটি লিখিত, এমসিকিউ এবং ভাইভা পরীক্ষার জন্য প্রযোজ্য। সিলেবাসটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে, যা প্রার্থীদেরকে আইনের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।

নম্বর বণ্টন: বার কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (http://www.barcouncil.gov.bd/enrolment-examination-syllabus/) নম্বর বণ্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।


GROUP – A: দেওয়ানী কার্যবিধি (The Code of Civil Procedure, 1908)

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (CPC) বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই অংশে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  1. দেওয়ানী কার্যবিধির পরিধি ও প্রয়োগ: দেওয়ানী কার্যবিধির সংজ্ঞা, প্রয়োগের ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন ধারা ব্যাখ্যা।
  2. দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা: মোকদ্দমার শ্রেণিবিভাজন, মামলা রজুর পদ্ধতি এবং কার্যক্রম।
  3. দেওয়ানী আদালত সমূহের এখতিয়ার: স্থানিক ও বিষয়গত এখতিয়ার, আদালতের বিচারিক ক্ষমতার ব্যাখ্যা।
  4. Res Judicata এবং Res Subjudice: এই নীতিগুলোর সংজ্ঞা, শর্তাবলী, এবং প্রয়োগের ক্ষেত্র।
  5. মোকদ্দমা রজু ও প্রক্রিয়া: মামলা দায়েরের নিয়মাবলী, আরজি দাখিলের পদ্ধতি।
  6. মোকদ্দমার পক্ষসমূহ: পক্ষ নির্ধারণের নীতিমালা, পক্ষ পরিবর্তন, এবং পক্ষ যুক্তিকরণের প্রক্রিয়া।
  7. আরজি ও জবাব এবং সংশোধন: আরজি সংশোধনের নিয়মাবলী ও প্রয়োজনীয়তা।
  8. সমন, সাক্ষ্য, ও শুনানি প্রক্রিয়া: সমন জারি, সাক্ষ্য গ্রহণের পদ্ধতি, জেরা এবং পুনঃপরীক্ষা।
  9. বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি (ADR): মধ্যস্থতা, শালিস, আপিল মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া ও গুরুত্ব।
  10. ডিক্রি জারি, আপিল, রিভিশন, রিভিউ: রায় ও ডিক্রির পার্থক্য, আপিলের ধাপ, রিভিশন ও রিভিউ প্রক্রিয়া।

GROUP – B: ফৌজদারি কার্যবিধি (The Code of Criminal Procedure, 1898)

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  1. সংজ্ঞা ও আদালতের গঠন: ফৌজদারি আদালতের শ্রেণিবিভাজন, আদালতের কাঠামো এবং কার্যক্রম।
  2. অপরাধের তথ্য, গ্রেফতার ও পুনরায় গ্রেফতার: এফআইআর, গ্রেফতার প্রক্রিয়া, জামিনের শর্তাবলী।
  3. জরুরী অবস্থায় অস্থায়ী আদেশ: ১৪৪ ধারার অধীনে অস্থায়ী আদেশের প্রয়োগ এবং নিয়মাবলী।
  4. শান্তি রক্ষা ও মুচলেকা: শান্তি রক্ষার নির্দেশাবলী এবং মুচলেকা গ্রহণের পদ্ধতি।
  5. ফৌজদারি মামলার বিচার প্রক্রিয়া: অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তি উপস্থাপন এবং রায় প্রদান।
  6. আপিল, রিভিশন, রেফারেন্স: আপিলের প্রকারভেদ, রিভিশন প্রক্রিয়া এবং রেফারেন্সের নিয়মাবলী।
  7. জামিন, মামলা স্থানান্তর, সাক্ষ্য গ্রহণের কমিশন: জামিনের শর্ত, মামলা স্থানান্তর এবং সাক্ষ্য গ্রহণের কমিশন সংক্রান্ত বিধান।

GROUP – C: দণ্ডবিধি (The Penal Code, 1860)

দণ্ডবিধি, ১৮৬০ বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত:

  1. অপরাধের প্রয়োজনীয় উপাদান: অপরাধ গঠনের উপাদানসমূহ, অপরাধের মানসিক অবস্থা এবং দায়িত্ব নির্ধারণ।
  2. যৌথ দায়বদ্ধতা, প্ররোচনা, ষড়যন্ত্র: যৌথ অপরাধ, প্ররোচনার সংজ্ঞা, ষড়যন্ত্রের উপাদান ও প্রয়োগ।
  3. রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ, জনশৃঙ্খলা বিরোধী অপরাধ: রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রযোজ্য আইন।
  4. সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ, মানহানি: চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, এবং মানহানির অপরাধ ও শাস্তি।
  5. মানবদেহের বিরুদ্ধে অপরাধ: হত্যা, আঘাত, ধর্ষণ, অপহরণ, এবং এর শাস্তির বিধান।

GROUP – D: সাক্ষ্য আইন (The Evidence Act, 1872)

সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণ গ্রহণের নিয়ম নির্ধারণ করে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  1. সাক্ষ্যের শ্রেণিবিভাগ: মৌখিক, দালিলিক, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সাক্ষ্য।
  2. প্রসঙ্গিক ঘটনা, স্বীকারোক্তি: প্রাসঙ্গিকতার মানদণ্ড, স্বীকারোক্তির প্রকারভেদ এবং শর্তাবলী।
  3. মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য: মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্যের গুরুত্ব, গ্রহণযোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা।
  4. প্রমাণের দায়িত্ব: প্রমাণের দায় কার, প্রমাণের মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া।
  5. সাক্ষীর পরীক্ষা: প্রধান পরীক্ষা, জেরা, পুনঃপরীক্ষার পদ্ধতি এবং সাক্ষ্যের বিশ্লেষণ।
  6. অ্যাডভারসারিয়াল ও ইনকুইসিটোরিয়াল সিস্টেমে বিচারকের ভূমিকা: বিচারকের কার্যাবলী ও ভূমিকা।

GROUP – E: তমাদি আইন (The Limitation Act, 1908)

তমাদি আইন, ১৯০৮ মামলা দায়েরের সময়সীমা নির্ধারণ করে। এতে অন্তর্ভুক্ত:

  1. তমাদি আইনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ: তমাদি আইনের সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্র।
  2. তমাদি গণনা: সময়সীমা গণনার নিয়মাবলী, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি এবং সঠিক সময় নির্ধারণ।
  3. মওকুফ ও প্রতারণার প্রভাব: মওকুফের শর্ত, প্রতারণা বা অসততার ক্ষেত্রে প্রভাব এবং এর বিধান।
  4. বিরুদ্ধ দখল ও সুখাধিকার অর্জন: বিরুদ্ধ দখলের সংজ্ঞা, অধিকার সুরক্ষা এবং সুখাধিকার অর্জনের প্রক্রিয়া।

GROUP – F: নৈতিকতা, বার কাউন্সিলের নিয়মাবলী এবং আইনগত সিদ্ধান্ত

  1. আইন পেশার সামাজিক দায়বদ্ধতা: আইনজীবীর নৈতিকতা, সামাজিক অবদান এবং দায়িত্ব।
  2. আইনজীবীর গোপনীয়তা, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: পেশাগত আচরণ, গোপনীয়তার নীতি এবং জবাবদিহিতার মানদণ্ড।
  3. বার কাউন্সিলের গঠন, কার্যাবলী ও ট্রাইব্যুনাল: বার কাউন্সিলের ভূমিকা, ট্রাইব্যুনালের কার্যাবলী এবং সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া।
  4. পেশাগত অসদাচরণের শাস্তি: শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, আইনগত প্রক্রিয়া এবং বিচার প্রক্রিয়া।
  5. আইনগত সিদ্ধান্ত ও রিপোর্ট: গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আইনি রিপোর্টের বিশ্লেষণ এবং বিচারিক প্রভাব।

উপসংহার:

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাস অনুসরণ করে প্রার্থীরা একটি সুসংগঠিত ও ফলপ্রসূ প্রস্তুতি নিতে পারবে। এই সিলেবাসটি প্রার্থীদের আইনের মৌলিক ধারণা, বিচারিক প্রক্রিয়া এবং পেশাগত নৈতিকতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বার কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।