সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (The Specific Relief Act, 1877) অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট কার্যকরতা (Specific Performance) সবসময় বাধ্যতামূলক নয়। যদি আদালত মনে করে যে, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যকরতা দেওয়া সম্ভব নয়, ন্যায়সংগত নয় বা অপ্রয়োজনীয়, তাহলে বিকল্প প্রতিকার দেওয়া হতে পারে।
বিকল্প প্রতিকারের ধরনসমূহ
১. ক্ষতিপূরণ (Compensation) – ধারা ২১
- যদি সুনির্দিষ্ট কার্যকরতা পাওয়া না যায়, তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে।
- আদালত চুক্তিভঙ্গের কারণে বাস্তবিক আর্থিক ক্ষতির ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেন।
🔹 উদাহরণ:
- কোনো বিক্রেতা চুক্তি অনুযায়ী জমি হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে, ক্রেতা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন।
- যদি একজন শিল্পপতি একটি মেশিন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে ক্রেতা বিকল্প উৎস থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য হলে সেই ক্ষতি তিনি আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করতে পারেন।
২. চুক্তি বাতিল এবং পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরত (Rescission and Restitution) – ধারা ২৭
- আদালত চুক্তি বাতিল করতে পারেন এবং পক্ষদ্বয়কে পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরিয়ে দিতে পারেন।
- যদি এক পক্ষ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এবং অন্য পক্ষ সেই চুক্তির অধীনে কোনো সুবিধা নিয়ে থাকে, তবে তাকে সেই সুবিধা ফেরত দিতে হতে পারে।
🔹 উদাহরণ:
- একজন ক্রেতা যদি অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকেন, কিন্তু বিক্রেতা চুক্তি অনুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আদালত চুক্তি বাতিল করে অগ্রিম টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
৩. চুক্তি সংশোধন (Rectification) – ধারা ৩১
- যদি চুক্তিতে কোনো ভুল বা অস্পষ্টতা থাকে, তবে আদালত সংশোধন করে পুনরায় কার্যকর করতে পারেন।
- এটি তখনই করা হয়, যখন চুক্তির মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়নি, বরং কেবল ভাষাগত বা কারিগরি ভুল রয়েছে।
🔹 উদাহরণ:
- জমি ক্রয়ের চুক্তিতে ভুলক্রমে জমির পরিমাণ ৫ কাঠার পরিবর্তে ৪ কাঠা লেখা হলে, আদালত সংশোধন করে সঠিক পরিমাণ উল্লেখ করতে পারেন।
৪. চুক্তির নির্দিষ্ট শর্ত বাস্তবায়নের আদেশ (Partial Specific Performance) – ধারা ১৪
- যদি পুরো চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তবে আদালত কিছু অংশ কার্যকর করার নির্দেশ দিতে পারেন।
- এটি তখনই সম্ভব হয়, যখন আংশিক বাস্তবায়ন অন্য পক্ষের জন্য ক্ষতিকর না হয়।
🔹 উদাহরণ:
- একজন বিক্রেতা যদি ১০ কাঠা জমি বিক্রি করার চুক্তি করেন, কিন্তু তার মালিকানায় থাকে ৬ কাঠা, তাহলে আদালত কেবল ৬ কাঠার জন্য কার্যকরতার আদেশ দিতে পারেন এবং বাকি অংশের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে পারেন।
৫. বাধা আদেশ (Injunction) – ধারা ৫৪
- আদালত কোনো পক্ষকে চুক্তিভঙ্গ বা বেআইনি কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
- এটি স্থায়ী (Permanent) বা সাময়িক (Temporary) হতে পারে।
🔹 উদাহরণ:
- যদি কেউ বেআইনিভাবে জমি দখল করতে চায়, তবে আদালত বাধা আদেশ দিয়ে তাকে দখল থেকে বিরত রাখতে পারেন।
- যদি কোনো ব্যক্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে অন্য কারও ক্ষতি করছে, তবে আদালত তার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিতে পারেন।
৬. নির্দিষ্ট সম্পত্তির পুনরুদ্ধার (Recovery of Possession) – ধারা ৮ ও ৯
- যদি চুক্তির অধীনে কোনো পক্ষ অন্য পক্ষের সম্পত্তি বেআইনিভাবে নিজের দখলে রাখে, তবে আদালত সেটি পুনরুদ্ধারের আদেশ দিতে পারেন।
- এটি বিশেষত ভূমি বা ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত বিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।
🔹 উদাহরণ:
- যদি একজন ব্যক্তি চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে না যান, তবে বাড়ির মালিক আদালতের মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের আদেশ পেতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ কেস রেফারেন্স
1️⃣ Damodar Das v. Anandram (1916)
- আদালত বলেন, যদি চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যকরতা দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
2️⃣ Ardeshir H. Mama v. Flora Sassoon (1928)
- এই মামলায় আদালত বলেন, যদি পক্ষদ্বয় আংশিক কার্যকরতা গ্রহণে সম্মত হয়, তবে সেটি দেওয়া যেতে পারে।
3️⃣ Bangladesh vs. Abdul Hakim (2005)
- এই মামলায় আদালত বলেন, যদি কোনো পক্ষ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে, তবে বাধা আদেশ বা ক্ষতিপূরণ আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
✔ সুনির্দিষ্ট কার্যকরতা না পাওয়া গেলে বিকল্প প্রতিকার পাওয়া যায়।
✔ ক্ষতিপূরণ, চুক্তি বাতিল, বাধা আদেশ, পুনরুদ্ধার, চুক্তি সংশোধন ইত্যাদি বিকল্প প্রতিকার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।
✔ আইনের বিভিন্ন ধারা ও কেস রেফারেন্স অনুযায়ী, আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এই প্রতিকার প্রদান করেন।