🔹 ভূমিকা
তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ২১ নির্ধারণ করে যে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হন (অর্থাৎ, নাবালক, মানসিকভাবে অসুস্থ, বা আইনগতভাবে সক্ষম নন), তাহলে তার পক্ষে একজন বৈধ প্রতিনিধি বা এজেন্ট কাজ করতে পারেন।
📌 এই ধারা মূলত দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়:
✅ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে তার অভিভাবক বা আইনগত প্রতিনিধি স্বাক্ষর বা অর্থ প্রদান করতে পারেন।
✅ যৌথ ঋণগ্রহীতা বা অংশীদারদের ক্ষেত্রে, একজনের স্বাক্ষর বা অর্থ প্রদান অন্যদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে না।
🔹 ধারা ২১-এর মূল বিধান
📜 (১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে তার অভিভাবক বা প্রতিনিধি কার্যকর হতে পারবেন
যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হন, তবে তার পক্ষে স্বাক্ষর বা অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন—
✔ তার আইনগত অভিভাবক (Lawful Guardian),
✔ তার প্রশাসনিক প্রতিনিধি (Committee বা Manager),
✔ অথবা উক্ত অভিভাবক বা প্রশাসনিক প্রতিনিধি কর্তৃক নিয়োজিত বৈধ এজেন্ট।
📌 এর মানে:
✔ যদি কোনো নাবালক বা মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ঋণগ্রহীতা হন, তাহলে তার অভিভাবক ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
✔ যদি অভিভাবক কোনো ঋণ পরিশোধ করেন বা স্বীকৃতি প্রদান করেন, তবে তা বৈধ বলে গণ্য হবে এবং নতুন তামাদি সময় শুরু হবে।
📜 (২) যৌথ ঋণগ্রহীতা বা অংশীদারদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান
যদি কোনো ঋণ বা দায় একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে গ্রহণ করেন, তাহলে শুধু একজনের স্বাক্ষর বা অর্থ প্রদান অন্যদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে না।
📌 এর মানে:
✔ যদি তিনজন অংশীদার মিলে একটি ঋণ নেন এবং একজন অংশীদার ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করেন, তবে বাকি দুইজনের ক্ষেত্রে নতুন তামাদি সময় শুরু হবে না।
✔ যদি একজন যৌথ ঋণগ্রহীতা লিখিত স্বীকৃতি দেন, তাহলে সেটি অন্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
📜 (৩) বিশেষ পরিস্থিতিতে এজেন্টের স্বীকৃতি বা পরিশোধ কার্যকর হবে
✅ (ক) হিন্দু বিধবা বা সীমিত সম্পত্তির মালিকের ক্ষেত্রে:
➡ যদি কোনো হিন্দু বিধবা বা হিন্দু আইনের অধীনে থাকা সীমিত সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তির কোনো দায়ের স্বীকৃতি দেন বা পরিশোধ করেন, তাহলে সেই স্বীকৃতি বা পরিশোধ তার উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
✅ (খ) যৌথ হিন্দু পরিবারে পরিবারের ব্যবস্থাপক কর্তৃক স্বীকৃতি বা পরিশোধ:
➡ যদি একটি হিন্দু অবিভক্ত পরিবার কোনো ঋণ গ্রহণ করে এবং পরিবারের ব্যবস্থাপক (Karta) ঋণের কোনো অংশ স্বীকৃতি দেন বা পরিশোধ করেন, তবে তা পুরো পরিবারের জন্য বৈধ হবে।
🔹 ধারা ২১-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র
✅ (১) নাবালকের অভিভাবক স্বাক্ষর দিলে তা কার্যকর হবে
➡ যদি একজন নাবালক তার বাবার পক্ষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পান এবং ঋণের দায় থাকে, তবে তার অভিভাবক স্বাক্ষর করলে সেটি আইনি হবে।
✅ (২) যৌথ ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দায় স্বতন্ত্র থাকবে
➡ যদি দুইজন ব্যক্তি যৌথভাবে ঋণ নেন, তবে একজনের অর্থ প্রদান অন্যজনের তামাদি সময় পরিবর্তন করবে না।
✅ (৩) হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের ব্যবস্থাপক কর্তৃক স্বীকৃতি কার্যকর হবে
➡ যদি পরিবারের প্রধান (Karta) কোনো ঋণের স্বীকৃতি দেন, তবে তা পুরো পরিবারের উপর প্রযোজ্য হবে।
🔹 উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
📌 উদাহরণ ১:
🔹 একজন ১৭ বছর বয়সী নাবালকের নামে ঋণ আছে।
🔹 তার বাবা বা অভিভাবক ঋণ পরিশোধ করলেন বা স্বাক্ষর করলেন।
🔹 এই পরিশোধ বৈধ হবে এবং নতুন তামাদি সময় শুরু হবে।
📌 উদাহরণ ২:
🔹 তিনজন যৌথ ঋণগ্রহীতা একটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
🔹 তাদের মধ্যে একজন কিছু টাকা পরিশোধ করলেন।
🔹 এই পরিশোধ বাকি দুইজনের ক্ষেত্রে নতুন তামাদি সময় শুরু করবে না।
📌 উদাহরণ ৩:
🔹 একজন হিন্দু বিধবা তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর ঋণের দায় স্বীকার করলেন।
🔹 পরবর্তীতে তার উত্তরাধিকারীরা এই দায়ের জন্য বাধ্য থাকবেন।
📌 উদাহরণ ৪:
🔹 একটি হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের ব্যবস্থাপক (Karta) পারিবারিক ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করলেন।
🔹 এই পরিশোধ পুরো পরিবারের ক্ষেত্রে বৈধ বলে গণ্য হবে।
🔹 ধারা ২১-এর উপকারিতা
✅ (১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে
➡ যদি একজন ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তবে তার প্রতিনিধি তার পক্ষে কাজ করতে পারেন।
✅ (২) যৌথ ঋণগ্রহীতাদের দায়িত্ব পৃথক রাখে
➡ একজন অংশীদার পরিশোধ করলে অন্যরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়বদ্ধ হবেন না।
✅ (৩) উত্তরাধিকারীদের জন্য দায় নির্ধারণ করে
➡ হিন্দু বিধবা বা সীমিত মালিকানার ক্ষেত্রে পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের জন্য দায় নির্ধারণ করা হয়।
✅ (৪) পরিবার পরিচালকের ক্ষমতা নির্ধারণ করে
➡ হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের ব্যবস্থাপক (Karta) যদি ঋণ পরিশোধ করেন, তবে সেটি পুরো পরিবারের জন্য বৈধ হবে।
🔹 উপসংহার
📌 ধারা ২১-এর সারসংক্ষেপ:
✔ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে তার অভিভাবক বা প্রতিনিধি বৈধভাবে স্বাক্ষর বা পরিশোধ করতে পারেন।
✔ যৌথ ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে একজনের পরিশোধ অন্যদের উপর প্রভাব ফেলবে না।
✔ হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের ব্যবস্থাপক কর্তৃক পরিশোধ পুরো পরিবারের জন্য বৈধ হবে।
✔ এই বিধান ব্যক্তি ও পরিবার উভয়ের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।