ধারা ২০: ঋণ পরিশোধ বা লিগেসির সুদ প্রদানের ফলে তামাদি সময়ের প্রভাব

🔹 ভূমিকা

তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ২০ নির্ধারণ করে যে, যদি কোনো ঋণের একাংশ বা লিগেসির সুদ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হয়, তবে তামাদি সময় নতুনভাবে গণনা শুরু হবে।

📌 প্রধান উদ্দেশ্য:
ঋণগ্রহীতা যদি আংশিক পরিশোধ করেন, তবে ঋণ দাবি করার নতুন সুযোগ তৈরি হয়।
কোনো ব্যক্তি যদি লিগেসির সুদ পরিশোধ করেন, তবে দাবির মেয়াদ পুনরায় গণনা শুরু হবে।
আইনটি ঋণদাতাদের সুরক্ষা দেয়, যেন ঋণগ্রহীতা তামাদি সময় শেষ হওয়ার কৌশল অবলম্বন করতে না পারেন।


🔹 ধারা ২০-এর মূল বিধান

📜 (১) ঋণের আংশিক পরিশোধ হলে তামাদি সময় নতুনভাবে গণনা হবে

যদি কোনো ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করা হয় এবং তা নির্ধারিত তামাদি সময় শেষ হওয়ার আগে হয়, তবে নতুন করে তামাদি সময় গণনা শুরু হবে।

📌 এর অর্থ:
✔ ঋণগ্রহীতা ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করলে তামাদি সময় পুনরায় শুরু হবে।
✔ নতুন করে মামলার সময় গণনা শুরু হবে, যা ঋণদাতাকে সুবিধা দেয়।

📜 (২) লিগেসির সুদ পরিশোধ হলে তামাদি সময় নতুন করে গণনা হবে

যদি কোনো ব্যক্তি লিগেসির সুদ প্রদান করেন, তবে সেই সময় থেকে তামাদি সময় পুনরায় গণনা হবে।

📌 এর মানে:
যদি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির সুদ পরিশোধ করা হয়, তবে নতুন তামাদি সময় শুরু হবে।
এটি উত্তরাধিকারীদের পক্ষে কাজ করে, যাতে তারা ন্যায্য পাওনা পেতে পারেন।

📜 (৩) পরিশোধের স্বীকৃতি অবশ্যই লিখিত হতে হবে

১৯২৮ সালের ১ জানুয়ারির পরে যদি কোনো সুদ বা ঋণের পরিশোধ করা হয়, তবে তা অবশ্যই লিখিত হতে হবে এবং অর্থপ্রদানকারী ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকতে হবে।

📌 এর কারণ:
মৌখিকভাবে পরিশোধের স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে।
লিখিত স্বীকৃতি থাকার ফলে ঋণদাতার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা হয়।


🔹 ধারা ২০-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র

(১) যদি ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করা হয়:

  • একটি ব্যাংক ঋণগ্রহীতা তামাদি হওয়ার আগেই কিছু টাকা পরিশোধ করেন।
  • পরিশোধের তারিখ থেকে নতুন তামাদি সময় গণনা শুরু হবে।

(২) যদি লিগেসির সুদ দেওয়া হয়:

  • কোনো ব্যক্তি তার পিতার উইলে নির্ধারিত অর্থের সুদ গ্রহণ করেন।
  • সুদ গ্রহণের দিন থেকে তামাদি সময় পুনরায় গণনা হবে।

(৩) পরিশোধের স্বীকৃতি লিখিত হলে:

  • কেউ চেক বা রসিদ দিয়ে ঋণের কিছু পরিশোধ করলে, সেটি লিখিত স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হবে এবং তামাদি নতুনভাবে গণনা হবে।

(৪) ঋণগ্রহীতা নিজে বা তার প্রতিনিধি পরিশোধ করলে:

  • যদি ঋণগ্রহীতা বা তার আইনগত প্রতিনিধি অর্থ পরিশোধ করেন, তবে তামাদি সময় পুনরায় গণনা হবে।

🔹 উদাহরণসহ ব্যাখ্যা

📌 উদাহরণ ১:
🔹 একজন ব্যক্তি ব্যাংকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, যার তামাদি সময় ৩ বছর।
🔹 ২ বছর পর তিনি ১ লাখ টাকা পরিশোধ করলেন।
🔹 তামাদি সময় নতুনভাবে এই ১ লাখ টাকা পরিশোধের দিন থেকে গণনা শুরু হবে।

📌 উদাহরণ ২:
🔹 একজন ব্যক্তি তার দাদার উইল অনুযায়ী লিগেসির সুদ গ্রহণ করলেন।
🔹 সুদ গ্রহণের দিন থেকে নতুন করে তামাদি সময় গণনা হবে।

📌 উদাহরণ ৩:
🔹 একজন ঋণগ্রহীতা তার ঋণের কিছু অংশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে পরিশোধ করলেন এবং স্বাক্ষরিত রসিদ দিলেন।
🔹 এই রসিদ অনুযায়ী তামাদি সময় পুনরায় গণনা হবে।

📌 উদাহরণ ৪:
🔹 একজন ঋণগ্রহীতা তার এজেন্টের মাধ্যমে ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধ করলেন।
🔹 তামাদি সময় পুনরায় শুরু হবে, কারণ এজেন্ট বৈধভাবে তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করেছেন।


🔹 ধারা ২০-এর উপকারিতা

(১) ঋণদাতাদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করে
➡ ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ হলে ঋণদাতা মামলার সময়সীমা পুনরায় পান।

(২) ঋণগ্রহীতার প্রতারণার পথ বন্ধ করে
➡ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তামাদি সময় পার করে ঋণ এড়ানোর চেষ্টা করতে পারবে না।

(৩) লিগেসি গ্রহণকারীদের অধিকার সুরক্ষা দেয়
➡ লিগেসির সুদ পরিশোধ হলে, লিগেসি দাবি করার সময়সীমা পুনরায় শুরু হয়।

(৪) লিখিত স্বীকৃতির মাধ্যমে আইনি প্রমাণ নিশ্চিত করে
➡ সুদ বা ঋণের পরিশোধ লিখিত স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য হয়।


🔹 উপসংহার

📌 ধারা ২০-এর সারসংক্ষেপ:
যদি ঋণের আংশিক পরিশোধ বা লিগেসির সুদ পরিশোধ করা হয়, তবে নতুন তামাদি সময় গণনা শুরু হবে।
পরিশোধের স্বীকৃতি লিখিত হতে হবে এবং অর্থপ্রদানকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
এই বিধান ঋণদাতাদের সুরক্ষা দেয় এবং প্রতারণা প্রতিরোধ করে।
আইনি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।