🔹 ভূমিকা
তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১৭ নির্ধারণ করে যে, যদি কোনো ব্যক্তি মামলার অধিকার অর্জনের আগেই মারা যান, তবে তামাদি সময় গণনার নিয়ম কী হবে।
📌 প্রধান উদ্দেশ্য:
✅ কোনো ব্যক্তি মামলা দায়েরের অধিকার অর্জনের পূর্বেই মারা গেলে, তার আইনি প্রতিনিধি যেন ন্যায়বিচারের সুযোগ পান।
✅ তামাদি সময় গণনার ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
✅ আদালতের আইনি দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মামলার পক্ষ অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
🔹 ধারা ১৭-এর মূল বিধান
📜 (১) মামলা দায়েরের অধিকার অর্জনের পূর্বেই বাদীর মৃত্যু হলে:
যদি কোনো ব্যক্তি মারা যান, যিনি জীবিত থাকলে মামলা করতে পারতেন, তবে তামাদি সময় গণনা শুরু হবে তখন থেকে, যখন তার আইনি প্রতিনিধি মামলা করার যোগ্য হন।
📌 এই বিধান নিশ্চিত করে:
✔ ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে তার পরিবারের ন্যায়বিচারের অধিকার হারিয়ে না যায়।
✔ উত্তরাধিকারী বা আইনি প্রতিনিধি যেন উপযুক্ত সময় পান মামলা দায়েরের জন্য।
📜 (২) মামলা দায়েরের অধিকার অর্জনের পূর্বেই বিবাদীর মৃত্যু হলে:
যদি মামলার সম্ভাব্য বিবাদী (defendant) মামলার অধিকার অর্জনের আগেই মারা যান, তবে তামাদি সময় গণনা শুরু হবে তখন থেকে, যখন তার আইনি প্রতিনিধি পাওয়া যাবে।
📌 এই বিধান নিশ্চিত করে:
✔ বিবাদীর মৃত্যুর কারণে মামলা দায়েরের অধিকার বিলুপ্ত না হয়।
✔ বাদী যেন বিবাদীর আইনি প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন।
📜 (৩) ব্যতিক্রম:
এই ধারা প্রি-এম্পশন অধিকার সংক্রান্ত মামলা, অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত মামলা, এবং উত্তরাধিকারী পদ সংক্রান্ত মামলায় প্রযোজ্য নয়।
📌 এটি নিশ্চিত করে:
✔ ভূমি বা স্থাবর সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত মামলায় এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।
✔ বিশেষত, প্রি-এম্পশন বা উত্তরাধিকারী পদ সংক্রান্ত মামলায় তামাদি সময় ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য হবে না।
🔹 ধারা ১৭-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র
✅ (১) বাদীর মৃত্যু হলে তামাদি গণনা:
- একজন ব্যক্তি আদালতে দেওয়ানি মামলা করতে পারতেন, কিন্তু মামলা দায়েরের পূর্বেই মারা যান।
- তখন তামাদি সময় গণনা শুরু হবে তার আইনি প্রতিনিধি মামলা দায়েরের যোগ্য হওয়ার সময় থেকে।
✅ (২) বিবাদীর মৃত্যু হলে তামাদি গণনা:
- যদি কোনো ব্যক্তি মামলার সম্ভাব্য বিবাদী হয়ে থাকেন, কিন্তু মামলা দায়েরের পূর্বেই মারা যান, তবে তামাদি গণনা শুরু হবে যখন তার উত্তরাধিকারী বা আইনি প্রতিনিধি পাওয়া যাবে।
✅ (৩) প্রি-এম্পশন বা সম্পত্তির দখল সংক্রান্ত মামলায় প্রযোজ্য নয়:
- প্রি-এম্পশন অধিকার বা সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত মামলায় তামাদি সময়ের ব্যতিক্রম করা যাবে না।
🔹 উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
📌 উদাহরণ ১:
🔹 একজন ব্যক্তি দেনার টাকা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি মারা যান।
🔹 তামাদি সময় গণনা হবে তখন থেকে, যখন তার উত্তরাধিকারী বা আইনি প্রতিনিধি মামলা করার যোগ্য হন।
📌 উদাহরণ ২:
🔹 একজন ব্যক্তি একটি চুক্তিভঙ্গ মামলার সম্ভাব্য বিবাদী ছিলেন, কিন্তু মামলা দায়েরের পূর্বেই মারা যান।
🔹 তখন তামাদি সময় গণনা শুরু হবে যখন তার উত্তরাধিকারী পাওয়া যাবে।
📌 উদাহরণ ৩ (প্রযোজ্য নয়):
🔹 যদি কোনো ব্যক্তি স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা দাবির মামলা করতে চান, কিন্তু তিনি মারা যান, তবে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।
🔹 প্রি-এম্পশন মামলা বা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলায় এই বিধান কার্যকর হবে না।
🔹 ধারা ১৭-এর উপকারিতা
✅ (১) বাদীর উত্তরাধিকারীর জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ সৃষ্টি করে
➡ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী যেন মামলা করার সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করে।
✅ (২) বিবাদীর উত্তরাধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুযোগ দেয়
➡ বিবাদীর মৃত্যুর কারণে মামলা নষ্ট হয়ে যায় না।
✅ (৩) আইনি প্রতিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করে
➡ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে অন্যায়ভাবে মামলার অধিকার হারিয়ে যেতে না পারে।
✅ (৪) আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা বা প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট বিলম্বের সমাধান দেয়
➡ মামলা দায়েরের সময় ন্যায়সঙ্গতভাবে গণনা করা হয়।
🔹 উপসংহার
📌 ধারা ১৭-এর সারসংক্ষেপ:
✔ মামলা দায়েরের অধিকার অর্জনের পূর্বেই যদি বাদী বা বিবাদী মারা যান, তবে তামাদি সময় গণনা হবে আইনি প্রতিনিধি পাওয়ার পর থেকে।
✔ এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মামলা ও দাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; প্রি-এম্পশন, স্থাবর সম্পত্তি, এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলায় প্রযোজ্য নয়।
✔ এই বিধান আইনি স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।