🔹 ভূমিকা
তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১৬ (Section 16) নির্ধারণ করে যে একজন ক্রেতা যিনি আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন, তিনি যদি সেই সম্পত্তির দখল পেতে মামলা করেন, তবে বিক্রয় বাতিলের জন্য বিচারাধীন সময় তামাদি সময় গণনার বাইরে রাখা হবে।
এটি নিশ্চিত করে যে, ক্রেতা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন এবং মামলা দায়েরের সময়সীমা ন্যায্যভাবে নির্ধারিত হয়।
🔹 ধারা ১৬-এর আইনি বিধান
📜 আইনের ভাষ্য:
“যে সময়সীমা সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্য ক্রেতার মামলা দায়েরের জন্য নির্ধারিত, সেই সময় গণনায় সেই সময় বাদ যাবে, যতদিন বিক্রয় বাতিলের জন্য আবেদন বিচারাধীন ছিল।”
📌 মূল বক্তব্য:
✅ নিলামের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয়ের পর যদি বিক্রয় বাতিলের আবেদন করা হয়, তবে তা বিচারাধীন থাকার সময় তামাদি সময়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
✅ ক্রেতা যেন আইনগত প্রতিকারের সুযোগ পান এবং আদালতের কারণে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
🔹 ধারা ১৬-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র
✅ (১) আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রয় হলে:
- একজন ব্যক্তি আদালতের নির্দেশে একটি সম্পত্তি ক্রয় করেন।
- কিন্তু বিক্রয়টি বাতিল করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।
- যতদিন বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন থাকবে, ততদিন তামাদি সময় গণনার বাইরে রাখা হবে।
✅ (২) সম্পত্তির দখল পাওয়ার মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে:
- যদি একজন ক্রেতা সম্পত্তির দখল না পান, তবে তিনি আদালতে মামলা করতে পারেন।
- কিন্তু বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন থাকলে, এই সময় বাদ দেওয়া হবে।
🔹 উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
📌 উদাহরণ ১:
🔹 ১ জানুয়ারি ২০২০-এ একজন ব্যক্তি আদালতের মাধ্যমে নিলামে একটি সম্পত্তি ক্রয় করেন।
🔹 ১ মার্চ ২০২০-এ বিক্রয় বাতিলের জন্য একটি আবেদন করা হয়, যা ২ বছর পর ১ মার্চ ২০২২-এ খারিজ হয়।
🔹 ক্রেতা ১ এপ্রিল ২০২২-এ সম্পত্তির দখল চেয়ে মামলা করতে চান।
➡ সাধারণ তামাদি সময় যদি ৩ বছর হয়, তবে তা গণনা শুরু হবে ১ মার্চ ২০২২ থেকে, কারণ বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন ছিল।
➡ অতএব, ১ এপ্রিল ২০২২-এ দায়ের করা মামলা তামাদি হবে না।
📌 উদাহরণ ২:
🔹 একজন ব্যক্তি আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে জমি কিনেছেন, কিন্তু দখল পাননি।
🔹 বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন ছিল ১ বছর।
🔹 আদালত বিক্রয় বৈধ ঘোষণা করার পর তিনি মামলা দায়ের করেন।
➡ সাধারণ তামাদি সময় থেকে ১ বছর বাদ দেওয়া হবে।
🔹 ধারা ১৬-এর উপকারিতা
✅ (১) ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে
➡ যদি বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন থাকে, তবে ক্রেতা যেন অন্যায়ভাবে সময় হারিয়ে না ফেলেন, তা নিশ্চিত করা হয়।
✅ (২) আদালতের প্রক্রিয়াগত বিলম্বের কারণে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে
➡ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা যেন মামলার পক্ষকে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
✅ (৩) কার্যকর তামাদি সময় নির্ধারণ করে
➡ প্রকৃতপক্ষে মামলা দায়েরের সুযোগ যথাযথভাবে পাওয়া যায়।
🔹 উপসংহার
📌 ধারা ১৬-এর সারসংক্ষেপ:
✔ বিক্রয় বাতিলের আবেদন বিচারাধীন থাকলে, সেই সময় তামাদি সময় গণনার বাইরে রাখা হবে।
✔ ক্রেতা যেন আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করা হয়।
✔ এটি আইনি স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।