🔹 ভূমিকা
আইনগত অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তামাদি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১২ মামলার জন্য নির্ধারিত সময় গণনার নিয়ম নির্ধারণ করে। এটি মূলত নিশ্চিত করে যে, মামলার তামাদি সময় গণনার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সময় বাদ দেওয়া হবে, যেমন-
✅ আদালতের ছুটি,
✅ নোটিশ প্রদানের সময়,
✅ আপিল বা পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সময়,
✅ আদালতের আনুষ্ঠানিক আদেশের কারণে বিলম্বিত সময়।
এ ধারা আইনের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
🔹 ধারা ১২-এর মূল বক্তব্য
(১) ধারা ১২-এর আইনি সংজ্ঞা
🔍 আইনগত বিধান:
“তামাদি সময় গণনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় থেকে নির্দিষ্ট কিছু সময় বাদ দেওয়া হবে, যা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।”
(২) ধারা ১২-এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
✅ (ক) সময় গণনার বাইরে যেসব সময় রাখা হবে:
১️⃣ আদালতের ছুটি:
- মামলার শেষ তারিখে যদি আদালত বন্ধ থাকে, তবে পরবর্তী কার্যদিবসে মামলা দায়ের করা যাবে।
২️⃣ আপিল বা পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে সময়:
- আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের রায়ের অনুলিপি সংগ্রহের সময় বাদ যাবে।
৩️⃣ সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করার আগে নোটিশ প্রদান:
- আইন অনুযায়ী, সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে ২ মাসের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক হলে, সেই ২ মাস তামাদি সময় গণনার বাইরে রাখা হবে।
৪️⃣ আদালতের আদেশজনিত বিলম্ব:
- যদি আদালত কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয়, যার কারণে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়, তবে সেই বিলম্বিত সময় বাদ যাবে।
❌ (খ) ধারা ১২-এর আওতার বাইরে থাকা বিষয়:
- সাধারণ চুক্তিভঙ্গ সংক্রান্ত মামলা বা ব্যক্তিগত দেনা-পাওনার ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য নয়।
🔹 ধারা ১২-এর প্রয়োগ ক্ষেত্র
✅ (১) আপিল বা পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে:
- নিম্ন আদালতের রায়ের অনুলিপি পেতে যদি ১৫ দিন সময় লাগে, তবে এই ১৫ দিন তামাদি সময়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
✅ (২) আদালতের ছুটির কারণে বিলম্ব হলে:
- যদি কোনো মামলার শেষ দিন আদালতের ছুটির দিন হয়, তবে পরবর্তী কার্যদিবসে মামলা দায়ের করা যাবে।
✅ (৩) সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা:
- যদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়েরের জন্য ৬ মাস সময় থাকে, এবং এর আগে ২ মাসের নোটিশ প্রদান বাধ্যতামূলক হয়, তবে এই ২ মাস তামাদি সময়ের অংশ হবে না।
✅ (৪) আনুষ্ঠানিক আদেশের কারণে বিলম্ব হলে:
- যদি আদালতের কোনো নির্দেশের কারণে মামলা দায়ের দেরি হয়, তবে সেই বিলম্বিত সময় বাদ দেওয়া হবে।
🔹 ধারা ১২-এর ব্যাখ্যাসহ উদাহরণ
📌 উদাহরণ ১:
একজন ব্যক্তি ১ জানুয়ারি ২০২4-এ আপিল করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিম্ন আদালতের রায়ের অনুলিপি পেতে ২০ দিন সময় লেগেছে। এই ২০ দিন তামাদি সময় গণনার বাইরে থাকবে।
📌 উদাহরণ ২:
একটি মামলা দায়েরের শেষ তারিখ ছিল ৫ মে ২০২৪, কিন্তু সেদিন আদালত বন্ধ ছিল। ফলে, মামলাটি ৬ মে ২০২৪-এ দায়ের করা হলে তা তামাদি বলে গণ্য হবে না।
📌 উদাহরণ ৩:
সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে ২ মাসের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। মামলা দায়েরের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৬ মাস থাকলে, প্রকৃতপক্ষে মামলার জন্য কার্যকর সময় থাকবে ৪ মাস।
📌 উদাহরণ ৪:
একটি মামলা দায়েরের জন্য সময়সীমা ছিল ৩ বছর। কিন্তু আদালত কোনো আদেশ দিয়ে মামলা স্থগিত রেখেছিল ২ মাসের জন্য। এই ২ মাস সময় গণনার বাইরে থাকবে।
🔹 ধারা ১২-এর প্রভাব
✅ (১) আইনি বিলম্বের কারণে অন্যায় প্রতিরোধ করে
➡ আদালতের ছুটি বা আনুষ্ঠানিক আদেশের কারণে মামলা দায়েরের সুযোগ হারানোর ঝুঁকি থাকে না।
✅ (২) মামলা দায়েরের সময় গণনায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করে
➡ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে যে সময় অপচয় হয়, তা বাদ দিয়ে প্রকৃত সময় গণনা করা হয়।
✅ (৩) আপিলকারীকে ন্যায়বিচারের সুযোগ দেয়
➡ নিম্ন আদালতের রায়ের অনুলিপি পেতে যে সময় লাগে, তা বাদ দিয়ে আপিলের সময় গণনা করা হয়।
✅ (৪) সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সময় সুবিধা দেয়
➡ নোটিশ প্রদানের সময় বাদ দিয়ে সরকারী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুযোগ দেওয়া হয়।
🔹 উপসংহার
📌 ধারা ১২-এর সারসংক্ষেপ:
✔ নির্দিষ্ট কিছু আইনি ও প্রশাসনিক কারণে তামাদি সময় গণনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
✔ আদালতের ছুটি, আপিলের জন্য অপেক্ষার সময়, আনুষ্ঠানিক আদেশজনিত বিলম্ব ইত্যাদি সময় গণনার বাইরে রাখা হয়।
✔ এটি আইনি স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই, তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১২ ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা অনিবার্য বিলম্বের কারণে মামলা খারিজ হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে এবং আইনগত অধিকার সংরক্ষণে সহায়তা করে।