সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭-এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী, আদালত তখনই চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction) প্রদান করে, যখন কোনো ব্যক্তির আইনি অধিকার লঙ্ঘিত হয় এবং এটি প্রতিরোধের জন্য স্থায়ী আদেশের প্রয়োজন হয়।
কোন পরিস্থিতিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়?
১. আইনগত বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন রোধ করতে
যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমন কোনো বাধ্যবাধকতা (obligation) ভঙ্গ করে, যা অপর পক্ষের পক্ষে প্রতিরোধ করা জরুরি, তাহলে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
➡ উদাহরণ: কোনো ভাড়াটিয়া চুক্তিভঙ্গ করে বাড়ির কাঠামো পরিবর্তন করলে, মালিক আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারেন।
২. সম্পত্তির ক্ষেত্রে অধিকারের লঙ্ঘন ঠেকাতে
যদি কোনো ব্যক্তি অপরের সম্পত্তিতে অনধিকার চর্চা করেন বা ভোগদখল বাধাগ্রস্ত করেন, তবে আদালত স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
➡ উদাহরণ: মালিকের অনুমতি ছাড়া কেউ তার জমিতে নির্মাণ করলে, মালিক চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাকে থামাতে পারেন।
৩. যখন আর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়
যদি কোনো ক্ষতির ক্ষেত্রে অর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট প্রতিকার না হয়, তখন আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
➡ উদাহরণ: যদি কোনো কারখানা বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষিত করে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অর্থের পরিবর্তে কারখানাটিকে বন্ধ করতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারেন।
৪. একাধিক মামলা প্রতিরোধ করতে
যদি কোনো মামলায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করলে একাধিক মামলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আদালত এটি প্রদান করতে পারে।
➡ উদাহরণ: যদি একটি গ্রামের লোকজন ভুলভাবে দাবি করে যে একটি রাস্তা তাদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত, এবং বিভিন্ন ব্যক্তি আলাদাভাবে মামলা দায়ের করে, তাহলে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একবারেই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
৫. চুক্তিভঙ্গ প্রতিরোধ করতে
যদি কোনো পক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করে বা লঙ্ঘনের হুমকি দেয়, তাহলে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
➡ উদাহরণ: কোনো কোম্পানির পরিচালকরা বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা করে কোম্পানির তহবিল অপব্যবহার করতে চাইলে, বিনিয়োগকারীরা আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করতে পারেন।
উপসংহার
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হলো এমন একটি প্রতিকার, যা ব্যক্তি বা সংস্থার অধিকার রক্ষায় আদালত প্রদান করে। এটি মূলত তখনই দেওয়া হয়, যখন অধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে এটি অপরিহার্য এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট প্রতিকার নয়।